স্বপ্নের রাজ্যের মনীষা পর্ব ১
তাকে তার মা ডাকছে, কিন্তু কোন উত্তর নেই। সে এখনো অনেক ছোট, বোঝেনা কিছু। তার মা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। তার মা তাকে বড় একজন বিজ্ঞানী বানাবে। আবিষ্কার করবেন নতুন নতুন অনেক কিছু। সেতো পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তাই তাকে নিয়ে এরকম স্বপ্ন থাকাটা ও স্বাভাবিক।
তার বাবা তাকে নিয়ে একদিন যাচ্ছে, সে বলল: বাবা আমরা কোথায় যাচ্ছি।
বাবা বললেন: আমার সাথে চলো গেলেই বুঝতে পারবে।
মেয়েটা কিছুই বুঝতেছে না। তাকে কোথায় নেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া কিছুক্ষণ পরে মেয়েটার সত্যিই অবাক হয়, সে দেখে তার চোখের সামনে তার মতো আরো অনেক জন বসে আছে। এখন সবাই তার বন্ধু। তার বাবা তাকে প্রতিদিন একই জায়গায় নিয়ে যায়। মেয়েটি এখনো তার নাম জানে না। কেন সে এখানে আসে সেটাও সে জানে না।
যাইহোক মেয়েটার এখানে আসতে খুব ভালো লাগে। বাবা চলে গেলে সবাই মিলে খেলা করে, অনেক আনন্দ হয়। কিছুক্ষণ পর বাবা আবার তাকে নিতে আসে। এভাবেই মেয়েটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।
একদিন সকালে সে তার নামটি কে আবিস্কার করে। তার ইস্কুলের ম্যাডাম তাকে ডাকছে: মনীষা এদিকে আসো।
মনীষা ম্যাডামের কাছে এলো। ম্যাডাম বলল: তুমি আমাদের স্কুলের মেধাবী ছাত্রী এবার যে, ছড়া আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হচ্ছে সেখানে কিন্তু আমাদের অবশ্যই জিততে হবে। সেখানে অনেক উচ্চপদস্থ সরকারি ব্যক্তিবর্গ আসবেন।
মনীষা ম্যাডামকে বলে: ম্যাডাম আমরাই জিতবো আপনি কোন চিন্তা করবেন না। মনীষা তখনও কেবল ক্লাস থ্রিতে।
মনীষা খুব হাসিখুশি স্বভাবের মেয়ে। সারাদিন মানুষকে যেমন হাসাতে পারে নিজেও হাসতে পারে। তাদের পরিবারটা অনেক সুখী। মনীষা দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর। মনি সাঁতার প্রতিযোগিতায় কথা তার পরিবারকে জানাই। সে অনেক আগে থেকেই কবিতাগুলো মুখস্থ করে ফেলেছে। ছড়া আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অনেক স্কুল অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের স্কুলের পুরস্কার জিতে নেয়।
এভাবেই মনীষা প্রত্যেকটা প্রতিযোগিতায় তার মেধার পরিচয় দেয়। এখন সে আরও বড় হয়েছে পিএসসি গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে পাস করেছে এবং আরেকটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মনীষার মা-বাবা খুব খুশি। তাদের মেয়ে সম্পূর্ণ জেলায় নাম্বার 1 হয়েছে। সেই ছোট্ট মেয়েটি এখন ক্লাস সিক্সে। সে তার স্কুলের সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলেছে। তাদের স্কুলের সবাই মেয়ে। মনীষা এখন আরও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা শুরু করছে। সে চায় তার মা বাবার স্বপ্ন সে যেন পূরণ করতে পারে। মনীষা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় তার মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যাই। মনীষার ঘুরতে অনেক ভালো লাগে।
এইতো কিছুদিন আগেই তারা ঘুরে এলো সোনারগাঁও থেকে। অনেক কিছু শিখলো মনীষা। মনিশ আরো অনেক ভালো লাগার জায়গা ছিল এটি। সে অনেকের মুখে আর বইয়ের পড়েছিল এই জায়গাটি সম্পর্কে। আর ক্লাস সেভেনে জায়গাকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। মনীষা ভাবছে তার পরিবার অনেক ভালো তার সমস্ত কথায় তার পরিবার মেনে নেয়। মনীষা এখন সপ্তম শ্রেণীতে তাই সে জায়গাটি সম্পর্কে আগে থেকেই অনেক কিছু জানতো, শুধু বাকি ছিল চোখে দেখে জিনিসটা সম্পর্কে জানা আর সেটা এখন পূরণ হলো। কিছুদিন পরেই মনীষা ক্লাস এইটে পা রাখবে। তাই তাকে পড়তে একবারের মতোই পড়ালেখা নিয়ে বিজি দেখা যাচ্ছে অনেক কয়দিন ধরে।
মেধাবী ছাত্রী বলে কথা। মেধাবী বলেই তো এবারও সে তার স্কুলে ফার্স্ট হয় অষ্টম শ্রেণীতে পা রাখল। তার বাবা তাকে বলল,
মনীষা এবার কিন্তু আমরা কোথাও ঘুরতে যাব না। এই বছর তোমাকে সুন্দর করে পড়ালেখা করতে হবে। কারণটা তুমিও জানো।
ঠিক আছে বাবা, তাই হবে। কিন্তু পরের বছর আমরা সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাব।
ঠিক আছে।
এরপর মনীষা মনোযোগ সহকারে পড়ালেখা শুরু করে। জেএসসিতে ও বরাবরের মতো গোল্ডেন এ প্লাস এনেছে মনীষা। রেজাল্ট দেখে সবাই খুশি। সবাই মিষ্টিমুখ করে এবং মনীষার জন্য আশীর্বাদ করে।
তার মা তাকে নিয়ে আগে থেকেই অনেক স্বপ্ন দেখে রেখেছে এখন রেজাল্ট দেখে তার মন খুশিতে ভরে যায়।
মনীষার বাবা এখন মনীষাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে। ডিজিটাল যুগ বলে কথা, তার মেয়ে আবার পিছিয়ে থাকবে কেন?
মনীষা একটি কোর্স জইন করে। যেখানে কম্পিউটারের সবকিছু শিখে নেয় মনীষা। মনীষা এখান থেকে জানতে পারে হ্যাকিং সম্পর্কে। মনীষা কিছুটা হ্যাকিং ও শিখে ফেলে।
এখন শীতকাল শুরু হয়েছে, মনীষা প্রতিনিয়ত ও তার বাবাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, সে সেন্টমার্টিন ঘুরতে যাবে। এবার বাবা কেন যেন যেতে আগ্রহী না, কিন্তু মনীষার তো যেতেই হবে। এরপর মনীষা তার মাকে বোঝায় এবং বাবাকে রাজি করিয়ে ফেলে।
প্রত্যেক বারের মত মনীষা এবারও তার বাবাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। সেবার ঘুরতে তার শহর ঢাকা ছেড়ে চলেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। নাম শুনেই কেমন খুশি হয় তার মন, যেন অন্য এক পৃথিবীতে যাচ্ছে সে।
মনসা সেন্টমার্টিন চলে এসেছে। সে বেরাতে বেশিরভাগ শিখতে পছন্দ করে। সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন জিনিস দেখল। এখানেতারা তিন দিন ছিল। তিনদিনে পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ঘুরে দেখল। মনীশের অনেক ভালো লাগলো। সে ভাবতে থাকে, এইরকম দিবে যদি সে প্রতিদিন আসতে পারতো তাহলে কেমন হতো। সেন্টমার্টিন সম্পর্কে তার আরও বেশি জানতে ইচ্ছে করছে।
সে সেন্টমার্টিন সম্পর্কে জানতে অনেক লোকের কাছে গেল। তার বাবা-মা থেকে অনেক কিছু শিখলো। মনীষা দেখল শিখল তা দিয়ে সে একটি কবিতা লিখতে চেষ্টা করল যাতে মানুষের সেন্টমার্টিন সম্পর্কে এক জায়গায় অনেক তথ্য খুঁজে পায়। এভাবে কবিতা লেখা শুরু করলঃ
চারপাশে পানি,
মাঝখানে ভূমি
আর আমি সেখানে গিয়েছি
সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে অনেক কিছু শিখেছি
ঝোপঝাড়ের মাঝখানে অনেক বার লুকিয়েছি
সত্যি, না, সত্যি বলতেছি,
সেন্টমার্টিন দ্বীপ টি সুন্দর দেখতে অনেক খানি
যদি চান দেখতে, পরিবারের সঙ্গে হাসতে
বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপখ্যাত,
সেন্টমার্টিন হবে আপনার আসতে
আমি তো চাইনি এখান থেকে যেতে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উঠেছিলাম মেতেমনীষার অনুরোধে তার বাবা আরো দুই দিন থাকতে বাধ্য হন।
এরইমধ্যে মনীষার মনে অন্য ধরনের মনোভাব কাজ করা শুরু হয়। মনীষার একটি ছেলেকে খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু তার বাবা বা তার পরিবারের কেউ তা জানতো না।
ছেলেটিকে প্রথম দেখাতেই মনীষা আর চোখ ফেরাতে পারে নাই। মনীষা এরপর থেকেই ছেলেটির সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছে কিন্তু সুযোগ হচ্ছে না। ছেলেটির সঙ্গে কয়েকটি বন্ধু রয়েছে, হয়তো শুধু তারাই ঘুরতে এসেছে। ছেলেগুলো মনীষার পাশের হোটেলেই উঠেছে।
মনীষা তার পরিবারের জন্যই তাদের কারো সাথে কথা বলতে পারতেছে না। কিন্তু মনীষার তো তাদের সাথে কথা বলার খুব প্রয়োজন।
দুপুরের দিকে ছেলেটির একটি বন্ধু মনীষীদের হোটেলের দিকে এলে মনীষা একটু বের হয়ে আসার কথা বলে, সেই ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসে। তারপর মনীষা তার বুদ্ধি খাটিয়ে সে ছেলেটির সঙ্গে কথা বলা শুরু করে।
মনীষাঃ এই যে পলাশ, কেমন আছো?
রাকিবঃ আমাকে বলছেন।
মনীষাঃ হ্যাঁ, আপনার পাশে তো আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না!
রাকিবঃ আমি ভালো আছি, কিন্তু আমার নাম তো রাকিব। আর আপনাকে তো চিনলাম না?
মনীষাঃ এই যে দেখো আপনার নাম তো ভুলেই গেছি। আমি… আমি… এ এইতো কিছুদিন আগে আপনার সাথে আমার দেখা হলো, মনে নেই?
আর আপনার বন্ধুরা কই, প্রথম যখন দেখেছি তখন তো আপনার আরও কয়েকজন বন্ধু ছিল।
রাকিবঃ কই, আপনার সাথে তো আমার দেখা হয় নাই মনে হয়।
মনীষাঃ হ্যাঁ, আমি শিওর, আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে।
রাকিবঃ হয়তো বা, তো আপনি কেমন আছেন?
মনীষাঃ আমি ভালো আছি। ওই যে আপনার বন্ধু আপনাকে ডাকছে।
বন্ধুরা, আজকে এ পর্যন্তই গল্পটা কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা উৎসাহিত হব। এবং এই ধরনের গল্প আপনাদের সঙ্গে আরও শেয়ার করতে আমরা আনন্দ বোধ করব। পরের পর্বটি পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ফেসবুকে আমরাঃ https://www.facebook.com/akulvai.304/
টুইটারে আমরাঃ https://twitter.com/AkulVai
ইউটিউব আমরাঃ https://www.youtube.com/channel/UCs6BkgpPV_a19F2JN3zEpgw
ইনস্টাগ্রাম আমরাঃ https://www.instagram.com/akulvai/
No comments