বিজ্ঞানের মজার প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব ৩
আকুল ভাই
বিজ্ঞানের মজার প্রশ্ন
প্রঃ। যন্ত্রপাতিকে বাইরের চৌম্বকত্ব থেকে রক্ষার জন্য ঢাকা চাই
(ক) কাচ দিয়ে, (খ) রবার দিয়ে, (গ) পিতলে, (ঘ) লােহার পাতে, কোনটি?
(খ) লোহার আবরক ।
প্রঃ। মেরুবিহীন চুম্বক হয় কি?
হ্যা, মেরুবিহীন চুম্বক হয়। কোন লােহার আংটার গায়ে আন্তরিক তার জড়িয়ে বেশি মাত্রায় বিদ্যুৎ পাঠালে সেটি চুম্বকে পরিণত হয় কিন্তু কোন মেরু থাকে না ।
প্রঃ। অয়শ্চৌম্বক পদার্থ কি?
যে সমস্ত পদার্থের উপর চুম্বকের আকর্ষণ খুব বেশি তাকে বলে অয়শৌম্বক পদার্থ । যেমন লােহা, নিকেল ও কোবল্ট।
প্রঃ। “পৃথিবী একটি চুম্বক” কথাটি কি ঠিক?
হ্যাঁ, কথাটি ঠিক যে পৃথিবী একটি চুম্বক। কোন চুম্বক মুক্ত অবস্থায় ঝুলিয়ে দিলে কিছুক্ষণ পর সেটি উত্তর-দক্ষিণ মুখ হয়ে থাকে। চুম্বক কেবল চুম্বককে আকর্ষণ করে সিদ্ধান্ত করা যায় পৃথিবী একটা চুম্বক। সাধারণ চুম্বকের মত পৃথিবীরও দুটি মেরু আছে। উত্তর মেরু কানাডায় 74° উত্তর অক্ষাংশে আর 100° পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত আর দক্ষিণ মেরু কুমেরু অঞ্চলে 74° দক্ষিণ অক্ষাংশে 150° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে।
প্রঃ। নৌকম্পাস কি?
জাহাজের চলার সময় দিকনির্ণয়ের কাজে যে কম্পাস ব্যবহার করা হয় তাকে বলে নৌকম্পাস। নৌকম্পাসে এক বা তার চেয়ে বেশি চুম্বক শলাকা একটা গােল চাকতির নিচে আটকানাে থাকে। শলাকা ঘুরলে চাকতিও ঘুরে যায়। এতে চুম্বক শলাকার উত্তর মেরুর কাছে উত্তর (N) দক্ষিণে দক্ষিণ (S), পূর্ব (E) ও পশ্চিম (w) লেখা থাকে। চাকতি সুদ্ধ চুম্বক শলাকা আনুভূমিভাবে রাখা হয়। এটি থাকে একটা গােলাকার বাক্সে। দুটি আংটার সাহায্যে এমনভাবে এটা ঝুলে থাকে যে জাহাজের দোলা সত্ত্বেও শলাকা উত্তর দক্ষিণমুখি থাকে তাই দিক নির্ণয়ে অসুবিধা হয় না।
প্রঃ। 40 ও 60 মেরুশক্তি বিশিষ্ট দুটি চুম্বকের মেরু বায়ুমাধ্যমে 10 সে.মি. ব্যবধান রয়েছে। এদের মধ্যে যে বল ক্রিয়া করে তার পরিমাপ হবে (ক) 40 ডাইন, (খ) 24 ডাইন, (গ) 20 ডাইন। এর কোনটি ঠিক?
(খ) ২৪ ডাইন।
প্রঃ। তড়িৎ কি ও কত রকমের?
( প্রায় ৬০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে গ্রীক দার্শনিক থালেস প্রথম আবিষ্কার করেন যে, এক খন্ড অ্যাম্বারকে পশমী কাপড় দিয়ে ঘষলে কাগজের টুকরােকে আকর্ষণ করে, এরপর ১৬০০ খ্রীস্টাব্দে উইলিয়াম গিলবার্ট প্রমাণ করেন যে কাচ, ইকাে রজন ইত্যাদিকে রেশমী কাপড় বা পশমে ঘষলে এক বিচিত্র শক্তি অর্জন করে। তিনি এর নাম দেন ইলকট্রিসিটি বা তড়িৎ। অ্যাম্বারের গ্রীক প্রতিশব্দ ইলেকট্রন থেকেই এই নামকরণ হয়। এই ধরনের কাগজের টুকরাে বা হালকা বস্তু আকর্ষণ করার গুণকে বলা হয় তড়িৎ। ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন এই বিদ্যুৎ সাধারণ বস্তুতে আবদ্ধ থাকে একে বলে স্থির তড়িৎ।
কোন কাচের দন্ডকে রেশমী কাপড় দিয়ে ঘর্ষণ করে আর ইবােনাইট দন্ডকে ফ্ল্যানেল দিয়ে ঘর্ষণ করে সুতােয় ঝুলিয়ে দিলে দেখা যায় পরস্পর আকর্ষণ করে। আবার আর একটি কাচ দন্ডকে রেশমী কাপড়ে ঘর্ষণ করে কাচদন্ডের কাছে আনলে দেখা যায় পরস্পর বিকর্ষণ ঘটে। এতেই বােঝা যায় দুই ধরনের তড়িৎ এতে সৃষ্টি হয়েছে। কাচকে রেশমী কাপড়ে ঘর্ষণ করলে যে তড়িৎ সৃষ্টি হয় তাকে বলে ধনাত্মক তড়িৎ আর ইবােনাইটকে ফ্ল্যানেলে ঘষলে উৎপন্ন তড়িৎকে বলে ঋণাত্মক তড়িৎ ।
তাই তড়িৎ দু ধরনের, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক।
প্রঃ। ঘর্ষণে তড়িৎ সৃষ্টি হয়’ কথাটি কি ঠিক?
হ্যা, কথাটি ঠিক যে ঘর্ষণের ফলে তড়িৎ সৃষ্টি হয়। এক খন্ড কাচদন্ডকে রেশমী কাপড় দিয়ে ঘষার পর সুতােয় ঝুলানাে হালকা শােলার বলের কাছে আনলে বলটি কাচদন্ডের কাছে সরে আসে। রেশমে না ঘসে কাচদন্ড ধরলে বলটি কাছে আসে না। এতেই প্রমাণ হয় ঘর্ষনের ফলে কাচদন্ডে তড়িৎ উৎপন্ন হয়।
প্রঃ। পেট্রোলের ট্যাঙ্কারে শিকল ঝােলানাে হয় কেন?
ট্যাঙ্কারে পেট্রোল ভর্তি করে যাওয়ার সময় পেট্রোলে ঝাকুনি লাগায় স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। ট্রাকের সঙ্গে মাটির সংযােগ না থাকায় তড়িৎ মাটিতে চলে যেতে পারে। আর এক সময় স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে। ফল পেট্রোলে আগুন লেগে বিস্ফেরণের আশঙ্কা থাকে। এই জন্যই ট্রাক থেকে শিকল ঝুলিয়ে রাখা হয় যাতে শিকল মাটি স্পর্শ করে থাকায় উৎপন্ন তড়িৎ মাটিতে চলে যায়।
প্রঃ। বিকর্ষণই তড়িতাধানের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ’ কথাটিকে কি ঠিক বলা চলে?
কথাটি ঠিক যে বিকর্ষণই তড়িতাধানের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ, পরীক্ষায় দেখা যায়। তড়িতাহিত ইবােনাইট বা কাচদন্ড তড়িৎবিহীন বস্তুকে আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও এই তড়িতাহিত বস্তুগুলাে বিপরীতধর্মী তড়িতাহিত বস্তুকে আকর্ষণ করে। তাই কোন বস্তু তড়িতাহিত কিনা আকর্ষণের মধ্য দিয়ে বােঝা যায় না। অন্যদিকে বিকর্ষণ শুধু এক জাতীয় তড়িতেই ঘটে। এতে বােঝা যায় এক বস্তুকে অন্যবস্তু বিকর্ষিত করলে বুঝতে হবে বস্তুদুটো তড়িতাহিত আর দুটিতেই একই জাতিয় তড়িৎ আছে। তাই বলা যায় বিকর্ষণই শড়িতাধানের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।
প্রঃ। পরিবাহী ও অপরিবাহী কি?
যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ সহজে সঞ্চালিত হয় তাকে বলে পরিবাহী পদার্থ । আবার এমন কিছু পদার্থ আছে যার মধ্যে তড়িৎ সঞ্চালিত হয় না। এদের বলে অপরিবাহী।
প্রঃ। গােন্ডলীফ ইলেক্ট্রস্কোপ কি?
গােল্ডলীফ ইলেক্ট্রস্কোপ বা তড়িৎ বীক্ষণ যন্ত্র হল কোন বস্তুর তড়িতাধান বা তড়িতের চরিত্র পরীক্ষা করার যন্ত্র। এই যন্ত্রের প্রধান অংশ হল একটা ধাতব বাক্সের মধ্যে ঢােকানাে একটি ধাতব দন্ড। দন্ডের নিচের অংশে লাগানাে থাকে দুটি পাতলা সােনার পাত। পাত্রের সামনে ও পিছনে দেখার সুবিধার জন্য কাচ লাগানাে থাকে। বাক্সের ভিতরের বাতাস শুকননা রাখার জন্য এর মধ্যে শুষ্ক ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড রাখা থাকে। সােনার পাতের পিছনে ডিগ্রীর হিসাবে একটি গােলাকার চাকতি লাগানাে থাকে যাতে সােনার পাতের বিস্ফারিত হওয়া মাপা যায়। প্রথম স্বাভাবিক অবস্থায় সােনার পাত দুটি সােজা অবস্থায় থাকে। কিন্তু কোন আহিত বস্তুকে, যেমন ইবােনাইট দন্ডকে ফ্লানেলে ঘষে দন্ডটি যন্ত্রের চাকতিতে স্পর্শ করলে সােনার পাতদুটি বিস্ফারিত হয়। এতে বােঝা যায়, তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র ঋণাত্মক তড়িতে আহিত হয়েছে।
প্রঃ। বজ্ৰপরিবাহক বা লাইটনিং কন্ডাক্টর কি?
বজ্রপরিবাহক বা লাইটনিং কন্ডাক্টর একটি বিশেষ বস্তু যার মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে উঁচু বাড়ি ইত্যাদি রক্ষা করা যায়। এটি প্রথম ব্যবহারের কথা বলেছিলেন ১৭৪৯ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। এটি খুবই সরল ব্যবস্থা। কোন পুরু তামার পাত বাড়ির গায়ে এমনভাবে লাগানাে থাকে যাতে শেষ প্রান্ত মাটির গভীরে পোঁতা যায়। উপরের অংশ বাড়ির মাথায় কিছু সূচীমুখ সহ রাখা হয়। ঝড়-বৃষ্টির সময় মেঘ তড়িতাহত হয়ে পড়ে আর মেঘ ও পৃথিবীর মধ্যে তড়িৎ মােক্ষণ হলে তীব্র তড়িৎ প্রবাহ হয়ে থাকে। এই কারণে উঁচু বাড়ি আর গাছের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। তড়িতাহত মেঘ ছাদের উপর এলে পরিবাহী দন্ডের সূচী মুখে বিপরীত আধান সৃষ্টি হয়, আর নীচে সমজাতীয় আধান হয়। এর ফলে মেঘের আধান কমে আসে ও বজ্রপাতের ভয় দূর হয়। যদি বজ্রপাত হয় তা ধাতব দন্ডের মধ্য দিয়ে মাটিতে চলে যায় কোন ক্ষতির ভয় থাকে না।
প্রঃ। বজ্রপাত ও বজ্রনাদ কাকে বলে?
ঝড় বাদলের মুহূর্তে মেঘ দারুণভাবে তড়িতাহিত হয়ে পড়ে। তড়িতাহির্ত মেঘ ও পৃথিবীর মধ্যে তড়িত মােক্ষণ হলে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। একে বলে বিদ্যুতের ঝলক। আমরা যাকে বিদ্যুৎ চমকানাে বলি। এই সময় প্রসারণ সঙ্কোচন ঘটে ও প্রচণ্ড শব্দের সৃষ্টি হয়। যাকে মেঘগর্জন বলে। তড়িতাহিত মেঘে তড়িতের পরিমাণ বেশি হলে পৃথিবীর বুকে তড়িতের আবেশের ফলে তড়িৎ মােক্ষণ ঘটে, যারই নাম বজ্রপাত। বজ্রপাতের সময় যে প্রচন্ড শব্দ ওঠে তাই বজ্রনাদ।
No comments