বিজ্ঞানের মজার প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব ২
আকুল ভাই
বিজ্ঞানের মজার প্রশ্ন
প্রঃ। আকাশ নীল দেখায় কেন?
( বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিভিন্ন রঙের আলােকরশ্মি মিলে একটা গুচ্ছ হয়। এই আলােক তরঙ্গ কোন ক্ষুদ্র কণায় পড়লে কণাগুলাে তরঙ্গের আঘাতে তরঙ্গ শক্তি সংগ্রহ করে একে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাকে বলা হয় আলােকের বিক্ষেপণ। এটা নির্ভর করে আলােকের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। যে আলাের তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম তার বিক্ষেপণও তত বেশি। নীলবর্ণের আলােকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ায় সূর্যের আলােক ধূলিকণায় আপতিত হলে নীল ও তার কাছাকাছি রঙের আলােকরশ্মি বেশি বিক্ষিপ্ত হবে। এই জন্যই আকাশ নীল দেখায়।
প্রঃ। লাল আলাের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত? বেগুণী আলাের কত?
লাল আলাের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি ৮০০০A° অ্যাংস্ট্রম। বেগুনী আলাের সবচেয়ে কম ৪০০০A°।
প্রঃ। বিবর্ধক কাচে (১) উভ-উত্তল (২)উব-অবতল লেন্স ব্যবহার করা হয়, এর কোনটি ঠিক?
বিবর্ধক কাচে (১) উভ-উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়। এই লেন্স ছােট বস্তুকে বড় করে দেখায়।
প্রঃ। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল দেখায় কেন?
সূর্য যখন উদিত হয় বা অস্ত যায় তখন প্রায় দিগন্তের কাছাকাছি চলে আসে। এই সময় সূর্যরশ্মিকে মাথার উপর থাকার চেয়ে ঢের বেশ দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। বায়ুমন্ডলে ধুলাে আর সূক্ষ্মকণা থাকায় সূর্যের আলাে বিক্ষিপ্ত হবার ফলে বেগুনী, নীল আর সবুজরশ্মি সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয় কারণ এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম। লাল রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি বলে কম বিক্ষিপ্ত হয় তাই সূর্যাস্ত ও উদয়ের সময় সূর্যকে লাল দেখায়।
প্রঃ। নীল রঙের বদলে লাল রঙের আলাে ব্যবহার করলে পাতলা উত্তল লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য (১) বাড়বে (২)একই থাকবে বা (৩) কমবে?
লেন্সের আলােককেন্দ্র থেকে ফোকাস দূরত্বকে ফোকাস দৈর্ঘ্য বলে। নীল রঙের উপাদানের চ্যুতি লালের চেয়ে বেশি হওয়ায় নীল বর্ণের রশ্মি লেন্সের কাছে মিলিত হয় । লাল বর্ণের রশ্মি একটু দূরে প্রধান অক্ষে মিলিত হয়। সেইজন্য নীল বর্ণের বদলে লাল বর্ণ ব্যবহার করলে লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে।
অতএব (১) ঠিক ।
প্রঃ। বর্ণালীর সাতটি রঙ থেকে আবার সাদা আলাে সৃষ্টি করা যায়’ কথাটি ঠিক নাকি ঠিক নয়?
কথাটি ঠিক, বর্ণালীর সাত রঙকে আবার সাদা আলােয় ফিরিয়ে আনা যায়। এটি করা যায় কোন প্রিজম থেকে সাতটি রঙের বর্ণালী সৃষ্টির পর দ্বিতীয় একটি প্রিজম উল্টো অবস্থায় প্রথম প্রিজম থেকে নিঃসৃত বর্ণলীর সামনে রাখলে । এর ফলে বর্ণালীর সাতটি রঙ আবার সাদা আলােয় পরিবর্তিত হয়ে পর্দায় পড়ে।
এটি নিউটনের রঙের চাকতি থেকে দেখানাে যায়।
প্রঃ। অ্যাষ্ট্রনমিকাল টেলিস্কোপ বা নভােবীক্ষণ যন্ত্র কি?
অ্যাষ্ট্রনমিকাল টেলিস্কোপ বা নভােবীক্ষণ যন্ত্র হল এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে চাদ , সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি জ্যোতিষ্ককে বড় আকারে দেখা সম্ভব। এর দুটো অংশ থাকে (১)অভিলক্ষ্য, (২) অভিনেত্র।
প্রঃ। চুম্বক কি? চুম্বক ও চৌম্বক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য কি?
কোন কোন বিশেষ পদার্থের লােহার গুড়াকে বা লােহাকে আকর্ষণের ক্ষমতা থাকে, এছাড়াও এর দিক নির্দেশক ধর্মও থাকে। একেই বলে চুম্বক। চুম্বক দুধরনের হয়, প্রাকৃতিক চুম্বক ও কৃত্রিম চুম্বক। ম্যাগনেটাইট নামে একধরনের কালাে রঙের খনিজ পদার্থই হলাে প্রাকৃতিক চুম্বক। এর রাসায়নিক সংকেত হল Fe3O4 । এটা থেকেই ম্যাগনেট কথাটি এসেছে। কৃত্রিম উপায়ে কোন বস্তুকে চুম্বকে রূপায়িত করলে তাকে বলে কৃত্রিম চুম্বক। কৃত্রিম চুম্বক নানা ধরনের হয়, যেমন দন্ডচুম্বক, অশ্বক্ষুরাকৃতি চুম্বক, সূচীচুম্বক, তড়িৎ চুম্বক ইত্যাদি।
চুম্বক ও চৌম্বক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য হল : চুম্বকের দুটি নির্দিষ্ট মেরু থাকে, চৌম্বক পদার্থের থাকে না। চুম্বককে ঝুলিয়ে দিলে উত্তর দক্ষিণ মুখ করে ঝােলে। চৌম্বক পদার্থের এ গুণ নেই।।
চুম্বকের আকর্ষণী বা বিকর্ষণী ক্ষমতা থাকে, চৌম্বক পদার্থের থাকে না।
প্রঃ। কোন বস্তুর চুম্বক ধর্ম পরীক্ষার জন্য আকর্ষণের চেয়ে বিকর্ষণই নির্ভরযােগ্য, কথাটি কি ঠিক?
হ্যা, কথাটি ঠিক। কোন বস্তুর চুম্বকত্ব আছে কিনা জানার জন্য বস্তুটিকে কোন চুম্বকের কাছে আনা দরকার। সেক্ষেত্রে আকর্ষণ ঘটলেই বলা যায় না বস্তুটি চুম্বক পদার্থ কিনা। কারণ আকর্ষণ চুম্বকে চুম্বকে বা চুম্বকের সঙ্গে চৌম্বক পদার্থে। ঘটতে পারে। কিন্তু বিকর্ষণ ঘটলে বলা যায় বস্তুটি চুম্বকিত, কেননা বিকর্ষণ। দুটো বিপরীত মেরুর মধ্যেই ঘটে। তাই চুম্বক ধর্ম পরীক্ষা বিকর্ষণই নির্ভরযােগ্য ।
প্রঃ। চুম্বর মেরু, চৌম্বক অক্ষ, চৌম্বক আবেশ, উদাসীন অঞ্চল, চৌম্বক দৈর্ঘ্য, চৌম্বক ক্ষেত্র কি?
চৌধক মেরু: চুম্বকের সব জায়গা আকর্ষণ অঞ্চমতা সমান নয়, চুম্বকের দুপ্রান্তে যেখানে আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি তাকে চৌম্বক মেরু বলে । যে মেরু উত্তর দিকে থাকে তা উত্তর মেরু, আর যে মেরু দক্ষিণে থাকে তাকে দক্ষিণ মেরু বলে ।
চৌম্বক অক্ষঃ চুম্বকের দুই মেরুর সংযােজন রেখাকে চৌম্বক অক্ষ বলে ।
চৌম্বক আবেশ : চুম্বকের সংস্পর্শে বা কাছে কোন পদার্থ আনলে ওই পদার্থের মধ্যে সাময়িকভাবে চৌধক ধর্ম প্রকাশ পায়। একেই বলে চৌম্বক আবেশ।
উদাসীন অঞ্চল : চুম্বকের মাঝখানে কোন কার্যকর আকর্ষণ থাকে না। এই আকর্ষণবিহীন অঞ্চলকে বলে উদাসীন অঞ্চল।
চৌম্বক দৈর্ঘ্য : চুম্বকের দুটি মেরর দূরত্বকে চৌম্বক দৈর্ঘ্য বলে। চৌম্বক ক্ষেত্রে : কোন জায়গায় চুম্বক রাখলে চুম্বকটি তার চারদিকে প্রভাব বিস্তর করে। এই অঞ্চলকে বলে চৌম্বক ক্ষেত্র ।
প্রঃ। কুলম্বের সূত্র কি?
কুলম্বের সূত্র হল : নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি চুম্বক মেরুর মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ দুটি মেরুর মেরুশক্তির গুণফলের সমানুপাতিক ও দুটির দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
মেরু দুটির শক্তি m1 m2 আর উভয়ের মধ্যেকার দূরত্ব D হলে দুটির মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল হবে, F oo m1m2 Foo1/d2 সুতরাং F oo m1m2/d2
F = 1/u m1m2/d2 সেখানে u কোন ধ্রুবক । একে প্রবেশ্যতা বলে ।
প্রঃ। চুম্বক কিভাবে তৈরি করা যায়?
কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা যায় (ক) যান্ত্রিক উপায়ে চুম্বক দিয়ে পদার্থটিকে ঘর্ষণ করে,
(খ) বৈদ্যুতিক প্রণালীতে কোন ইস্পাতদন্ডের উপর বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে বিদ্যুত প্রবাহিত করে, (গ) পৃথিবীর প্রভাবের সাহায্যে।
প্রঃ। এর কোনটি ঠিক?
(ক) চুম্বককে উত্তপ্ত করলে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে চৌম্বক শক্তি হ্রাস পেতে থাকে।
(খ) উত্তপ্ত করলে চুম্বকশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে,
(গ) চুম্বক শক্তির হেরফের হয় না।
চুম্বককে উত্তপ্ত করলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে চৌম্বক শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চৌম্বক ধর্ম পুরাে নষ্ট হয়ে যায় । এই তাপমাত্রাকে কুরি বিন্দু বলে।
তাই (ক) ঠিক।
প্রঃ। চুম্বকের আণবিক তত্ত্ব কাকে বলে?
প্রত্যেক চুম্বকের দুটি বিপরীতধর্মী মেরু থাকে। চুম্বকের মাঝামাঝি ভেঙ্গে ফেললে দেখা যায় যতবারই ভাঙা যাবে প্রত্যেক টুকরােই চুম্বকের মত ব্যবহার করে। অর্থাৎ টুকরো দুটো মেরু থাকে। বিভাজন করে মেরু আলাদা করা যায় না । ক্রমে ভেঙ্গে বস্তুকে আণবিক অবস্থা পর্যন্ত নেওয়া যায় আর প্রত্যেক অণুকে স্বতন্ত্রই দুই মেরুসহ আলাদা চুম্বক বলা যায় ।
জার্মান বিজ্ঞানি ওরোবার এই তত্ত্বের অবতারণা করেন । একেই বলে চুম্বকের আণবিক তত্ত্ব।
No comments